কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে-বৈশাখ মাসে সবজি চাষ
কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে এছাড়াও কোন ঋতুতে কোন ফল হয় এ সকল বিষয়গুলো আমাদের প্রায় সবারই অজানা। আমাদের দেশ হচ্ছে কৃষি প্রধান দেশ। তাই এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবারই জেনে থাকা প্রয়োজন।
প্রিয় পাঠক ভাইয়েরা আপনারা যদি না জেনে থাকেন কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে কিংবা কোন ঋতুতে কোন ফল হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
ভূমিকা
আমাদের দেশ পরিচিত ছয় ঋতু দেশ হিসাবে। আমাদের এই দেশে উৎপাদন হয় নানারকম ফল ও শাকসবজি। কৃষির ক্ষেত্রে আমাদের দেশে তিনটি মৌসুম রয়েছে। মৌসুম তিনটি হচ্ছে যথাক্রমে, খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুম।
যদিও আমাদের কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে তারপরেও আমাদের কৃষিকাজ করতে হয় প্রতিদিনই আর এর কারণ হচ্ছে জলবায়ু ও আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক অবস্থান। কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে এ বিষয়ে আমাদের জানার আগ্রহ সবার। তাহলে চলুন এই সকল বিষয়গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করি।
কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে
বাংলাদেশ হচ্ছে ছয় ঋতুর দেশ। বাংলাদেশের ছয় ঋতুর প্রতি ঋতুতেই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভিত্তিতে ফসল উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশকে দুইটি মৌসুমে ভাগ করা হয়েছে। এই দুটি মৌসুমের মধ্যে একটি হচ্ছে খরিপ মৌসুম এবং অপরটি হচ্ছে রবি মৌসুম।
- রবি মৌসুম: বাংলাদেশে শীতকালীন মৌসুম কে বলে রবি মৌসুম। আর এই রবি মৌসুম চলে অক্টোবর থেকে প্রায় ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। আর এই রবি মৌসুমে পেঁয়াজ, মরিচ, গম, টমেটো, আলু, বেগুন, মটরশুটি, সরিষা ইত্যাদি ফসল বাংলাদেশে চাষ করা হয়ে থাকে। এই সকল ফসলগুলো শীতকালীন আবহাওয়ায় বেশি ভালো হয়। আর রবি মৌসুম যেহেতু মোটামুটি শীতকালের মধ্যেই পড়ে। তার জন্য এ সকল ফসল রবি মৌসুমে চাষ করা হয়।
- খরিপ মৌসুম: বাংলাদেশে খরিদ মৌসুম চলে এপ্রিল থেকে প্রায় সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। খরিপ মৌসুমে তাপমাত্রা প্রচন্ড পরিমাণে বেশি থাকে। এছাড়াও খরিপ মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয় অত্যন্ত বেশি পরিমাণে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে খরিপ মৌসুম একটি বর্ষাকালীন মৌসুম। খরিফ মৌসুমের ফসল গুলো উষ্ণ আবহাওয়া তে ভালো জন্মে। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার আবহাওয়া ও পরিবেশের ওপর এ ফসল গুলো বেশি জন্মে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ধান, লিচু, আম ইত্যাদি ফসল পাবনা কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বেশি জন্মে।
এ সকল তথ্যগুলো সত্য হলেও একেক এলাকার ফসল সেই এলাকার আবহাওয়ার উপর, সেই এলাকার জলবায়ু কিংবা পরিবেশের উপর নির্ভর করে জন্মে। আর এ সকল বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝে আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে।
কোন ঋতুতে কোন ফল হয়
ঋতু বৈচিত্র্যময় দেশ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের দেশে বিভিন্ন ঋতুতে যেমন বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষ হয় তেমনি একেক ঋতুতে চাষ হয় একেক রকমের ফল। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ঋতুতে কোন ফল হয়। প্রত্যেক ঋতুতে কয়েকটি করে ফলের নাম উল্লেখ করা হলো:
- গ্রীষ্মকাল: আম, কাঠাল, কলা ইত্যাদি ফল চাষ করা হয়।
- বর্ষাকাল: লটকন, পেয়ারা, আমড়া, লিচু ইত্যাদি ফল চাষ করা হয়।
- শরৎকাল: শরৎকালে বিভিন্ন রকম ফল যেমন নাশপাতি, বাদাম ইত্যাদি ফল চাষ করা হয়।
- হেমন্তকাল: বেদানা, কামরাঙ্গা ইত্যাদি ফল হেমন্তকালে চাষ করা হয়।
- শীতকাল: ডাব, কমলা, বরই, স্ট্রবেরি এছাড়াও আরো অনেক ফল শীতকালে চাষ করা হয়।
- বসন্তকাল: আম, আতা, বেল ইত্যাদি ফল বসন্তকালে পাওয়া যায়।
কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে
আমাদের বাংলাদেশ পরিচিত ছয় ঋতুর দেশ হিসেবে। আর এই দেশে নানা রকম ফল শাকসবজি ইত্যাদি ফলে ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে। তবে আবহাওয়া, জলবায়ু কিংবা ভৌগলিক অবস্থানে প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসে প্রতিদিনেই কোন না কোন কাজ আমাদের করতে হয়। আমাদের দেশে ফসল চাষের জন্য অপরিসীম হচ্ছে ঋতুর গুরুত্ব।
বাংলাদেশে প্রতি ঋতুতেই এক এক রকম ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ঋতুগুলো হচ্ছে গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা, শরৎ, হেমান্ত এবং বসন্ত। আমরা এখন জানবো বাংলাদেশে কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এ সম্পর্কে বিস্তারিত।
গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রধানত যে সকল শাকসবজি কিংবা ফসল উৎপন্ন হয় সেগুলো হচ্ছে
- মিষ্টি কুমড়া
- পটল
- টমেটো
- চাল কুমড়া
- কলমি শাক
- ডাটা শাক
- লাল শাক
- শসা
- ঢেঁড়স
- কাকরোল
- চিচিঙ্গা ইত্যাদি
এছাড়াও গ্রীষ্মকালে আরো অনেক রকম শাকসবজি উৎপন্ন হয়ে থাকে।
বর্ষাকাল: বর্ষাকালে বাংলাদেশের যে সকল শাকসবজি উৎপাদিত হয় সেগুলো হচ্ছে
- পুঁইশাক
- লাল শাক
- বরবটি
- বেগুন
- পাটশাক
- চিচিঙ্গা
- ঝিঙ্গা
এছাড়া বর্ষাকালে আরো অনেক শাকসবজি কিংবা ফসল উৎপাদন হয়।
শীতকাল: শীতকালে বাংলাদেশে অনেক রকমের ফসল কিংবা শাকসবজি উৎপাদিত হয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক শীতকালের ফসল শাকসবজি ইত্যাদি সম্পর্কে:
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- পালংশাক
- ওলকপি
- গাজর
- টমেটো
- বাদাম
- খেসারি
- লাউ ইত্যাদি
এছাড়াও শীতকালে আরো অনেক রকম শাকসবজি, ফসল উৎপাদিত হয়ে থাকে।
শরৎকাল: শরৎকালে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি ফল মূল উৎপাদিত হয়ে থাকে। চলুন জেনে নিয়ে শরৎকালে কোন কোন শাকসবজি কিংবা ফলমূল উৎপাদিত হয়।
- জলপাই
- আমলকি
- বাঁধাকপি
- তাল
- করমচা
- চালতা ইত্যাদি
হেমন্তকাল: হেমন্তকালও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ফলমূল উৎপাদন হয়ে থাকে যেমন
- পটল
- শুভ
- বেগুন
- বাঁধাকপি
- কামরাঙা
- চালতা ইত্যাদি
এছাড়াও হেমন্তকালে আরো অনেক রকমের ফলমূল শাকসবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। বলা হয় হেমন্তকালে সবচেয়ে বেশি ফসল যেমন শাকসবজি বলা হয় হেমন্তকালে সবচেয়ে বেশি শাকসবজি কিভাবে ফলমূল উৎপাদিত হয়ে থাকে।
বসন্তকাল: অন্যান্য ঋতুর মতো বসন্ত কালেও নানা ধরনের শাকসবজি কিংবা ফলমূল উৎপাদিত হয়ে থাকে। চলুন জেনে ঋতুর রাজা বসন্তের ফলমূল শাকসবজি সম্পর্কে
শষা
গাজর
কালাই
সজনে
আদা
ব্রড শিম ইত্যাদি
বৈশাখ মাসে কোন সবজি চাষ করা যায়
আমাদের এই ছয় ঋতুর বাংলাদেশের প্রত্যেক মাসে কোন না কোন ফসল কিংবা শাকসবজি চাষ করা যায়। কারণ বাংলাদেশ হচ্ছে একটি কৃষি প্রধান দেশ। তবে আমরা অনেকেই জানিনা বৈশাখ মাসে কোন সবজি বেশি চাষ করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বৈশাখ মাসে সবজি চাষ নিয়ে বিস্তারিত।
- মরিচ, পাট শাক, বেগুন, ঢেঁড়স, লাল শাক, আদা, হলুদ, পেঁয়াজ ইত্যাদি এসবের বীজ বপন এর উত্তম সময় হচ্ছে বৈশাখ মাস।
- বৈশাখ মাসের চারা রোপন করা যায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর।
- করলা , ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা ইত্যাদি বৈশাখ মাসে বেশি উৎপাদন করা যায়।
- পুঁইশাক, লালশাক, বরবটি অর্থাৎ খরিপ মৌসুমীর বিভিন্ন শাকসবজি গুলো বৈশাখ মাসে চাষ করার উত্তম সময়। এছাড়াও সংগ্রহ করা যায় সজিনা তরমুজের মতো ফলের বীজ।
- এছাড়াও বৈশাখ মাসে আরো অনেক রকমের ফসল কিংবা শাকসবজি উৎপাদন হয়ে থাকে।
শেষকথা
আমাদের দেশ হচ্ছে একটু একটি কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে কৃষি কাজের কোন বিকল্প নেই। তাই আমাদের কৃষিকাজ সম্পর্কে সব রকম ধারণা থাকা প্রয়োজন।প্রিয় পাঠক ভাইয়েরা আশা করছি কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে কিংবা কোন ঋতুতে কোন ফল হয়।
এছাড়াও বৈশাখ মাসে কোন সবজি চাষ করা হয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনারা সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
জাস্টিফাই ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ দেওয়া হয়।
comment url