নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - জেনে নিন বিস্তারিত

আসসালামুয়ালাইকুম প্রিয় পাঠক ভাই ও বন্ধুরা। আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি নতুন কিছু। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে নিম পাতা মানুষের শরীর থেকে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে আসছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে। তারপরেও আমরা অনেকেই জানিনা নিম পাতার বিভিন্ন উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
নিম পাতার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক ভাইয়েরা আপনারা যদি নিম পাতার উপকারিতা ও নিম পাতার অপকারিতা সম্পর্কে কিছু না জেনে থাকেন তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

আমরা সকলে নিম পাতার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে সবাই জানি। আমাদের সকলের বাড়ির আশেপাশেই এই নিম গাছ দেখা যায়। ত্বকের সৌন্দর্য চর্চায় কিংবা শরীরের যত্নে নিম পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। আর সেজন্য অনেকেই বলে নিম গাছ বাড়িতে থাকা মানে একজন ডাক্তার সবসময় বাড়িতে থাকা। 
মানুষের ত্বক, চুল, শরীর সব কিছু সুস্থ রাখতে নিম পাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম গাছের প্রতিটি অংশ আমাদের শরীরের জন্য কিংবা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

নিম পাতার উপকারিতা

স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হচ্ছে নিম পাতা। নিম পাতার উপকারিতা অনেক। কারণ অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে এই নিম পাতার মধ্যে। আর সেই জন্য উপমহাদেশে বিগত পাঁচ বছর ধরে নিম পাতা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে।

  • নিম পাতা ব্যবহারের ফলে দূর হয় বিভিন্ন ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ।
  • নিম পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নিম পাতা পরিষ্কার করে শরীরের জার্ম। এছাড়াও নিম পাতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ব্লাড প্রেসার।
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধে নিম পাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও প্রতিদিন সকাল সকাল নিমপাতা খেলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
  • পেট ব্যথা কিংবা গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা সমাধানের নিম পাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • জন্ডিস কিংবা লিভারের মতো সমস্যার জন্য নিমপাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া বদ হজম কিংবা পেট ফাপা রোগের জন্য নিম পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • হরমোন জনিত সমস্যার সমাধানের জন্য নিম পাতা অধিক কার্যকর।
  • এছাড়া নিমপাতা ব্যবহারের ফলে দূর হয় সর্দি-কাশি ইত্যাদি।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

নিম পাতার রস আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিম পাতার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অনেক। কিছু নিম পাতা সংগ্রহ করে সেগুলোকে বেটে নিয়ে সেগুলো থেকে চেপে রস বের করে নিতে হব। আর এই রস পান করার ফলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্বন্ধে

  • নিম পাতার রস সাধারণ পানির সাথে মিশিয়ে গোসল করলে ত্বকের বিভিন্ন রোগের সংগ্রাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও দূর হয় খুশকির সমস্যা।
  • নিম পাতার রসে অত্যন্ত উপকারী কিছু উপাদান রয়েছে তাই নিমপাতা পান করার ফলে দেহের হাড় শক্ত হয়।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতার রস পান করলে রক্ত পরিষ্কার হয়।
  • নিম পাতার রস আমাদের দাঁত ও মুখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিম পাতার রস দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দূর হয় এই মুখের দুর্গন্ধ ও পরিষ্কার হয় দাঁত।
  • নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে রক্ত থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের হয়। এবং এটি রক্তকে ডিটক্সিফাই করতে পারে। রক্ত ভালো থাকলে শরীরে তেমন রোগ হয় না।
  • এছাড়াও নিম পাতার রসের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম পাতার রস চুলে শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করলে চুলের উকুন দূর হয়। সুতরাং নিম পাতার রস আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার গুনাগুন

বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া রোগের প্রতিকার হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে কাঁচা হলুদ ও নিম। আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হচ্ছে কাঁচা হলুদ ও নিমপাতার গুনাগুন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার গুনাগুন আমাদের শরীরে কি কি উপকার করে।

  • এক গ্লাস পানির সাথে নিম পাতার রস এবং এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
  • নিমু হলুদ একসঙ্গে খেলে পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার থাকে। এছাড়াও আমাদের পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে।
  • প্রতিদিন নিম ও হলুদ একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে বিস্ময়কর ভাবে শরীরের শক্তি বাড়ে। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মিশ্রণ করে একপ্রকার বড়ি বাঁধানো যায়। আর সেই বড়ি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের ওজন ঠিক থাকে‌।
  • কাঁচা হলুদের থাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তাই কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসাথে মিশিয়ে গোসল করলে এলার্জির মতো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজে।
  • এগুলো ছাড়াও কাঁচা হলুদ নিম পাতার আরো অনেক গুনাগুন রয়েছে যা লিখে শেষ করা যাবে না।

নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

নিম পাতা এমন একটি উপাদান যা বিভিন্ন প্রকার রোগ থেকে আপনার ত্বককে বাঁচাতে পারে। আপনার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ কিংবা ত্বকের যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধান করে আপনার ত্বককে ফর্সা করতে পারে নিম পাতা। আর এই সকল উপকার পেতে আপনাদের নিম পাতা দিয়ে তৈরি করতে হবে এক ধরনের উপাদান। এতে আপনার ত্বক হবে ফর্সা। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে ত্বক ফর্সা করবেন।

নিম ও অ্যালোভেরা মিশ্রণ: নিউ এলোভেরার মিশ্রণ দিয়ে একপ্রকার ফেস ওয়াস তৈরি করতে হবে। এর জন্য কিছু নিম পাতা গুঁড়া এবং পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা নিতে হবে। এরপর এই দুইটি উপাদানকে ভালোভাবে মিশাতে হবে। ভালোভাবে মিশে যাওয়ার পর এই মিশ্রণটিকে ত্বকে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর ধুয়ে নিতে হবে। এতে ত্বক হবে ভরসা ও মসৃণ।

দই ও নিমের মিশ্রন: দই ও নিমের মিশ্রণ দিয়ে একপ্রকার ফেস ওয়াস তৈরি করতে হবে। এর জন্য নিম পাতার একটু পেস্ট বানিয়ে দিন এরপর তাতে পরিমাণ মতো দই দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে মেশানো হলে সেটিকে ত্বকে লাগিয়ে নিন। এরপর ৩০ মিনিট মতো রেখে দিন। তারপরে এটিকে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। আর এই মিশ্রণ ব্যবহারের ফলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। এতে ত্বক হবে সুন্দর ও ফর্সা।

নিম ও চন্দনের মিশ্রণ: নিম ও চন্দন দিয়ে ফেশ ওয়াস তৈরি করার জন্য নিমের গুঁড়ো এবং পরিমাণ মতো চন্দনের গুরু ও নিয়ে নিতে হবে এবার এতে কিছু পরিমাণ গোলাপ জল মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এগুলোকে ভালোভাবে মিক্স করতে হবে। তারপর এই মিশ্রণটিকে ত্বকে লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর কিছুক্ষণ পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এতে আপনার ত্বক থাকবে টানটান এবং সব সময় পরিষ্কার থাকবে। যার ফলে আপনার টক হবে ফর্সা।
এছাড়াও নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার আরো অনেক উপায় রয়েছে। যেগুলো ব্যবহার করলে আপনার ত্বক সব সময় ফর্সা এবং সুন্দর থাকবে।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

চর্মরোগ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত মারাত্মক একটি রোগ। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হয়ে থাকে। যদি আমাদের শরীরে চর্ম রোগ হয় তাহলে তা অত্যন্ত পরিবারে জ্বালাপোড়া করে। হাজার ওষুধ খেলেও এই রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না। তবে আপনি চাইলে সহজেই নিম পাতা ব্যবহার করে চর্মরোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত।

আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ হতে পারে যেমন এলার্জি, চুলকানি, ফুসকুড়ি, মুখের ব্রণ কিংবা আরো অনেক বড় রকমের চর্মরোগ হতে পারে। প্রথমে আমাদের কিছু নিম পাতা সংগ্রহ করে নিতে হবে। নিম পাতা গুলোকে ভালোভাবে বেটে নিয়ে সেই জায়গাগুলোতে লাগিয়ে দিতে হবে যেখানে চর্ম রোগ হয়েছে। কয়েকদিন এই উপকরণটি ব্যবহার করলে অত্যন্ত সহজেই বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

নিম পাতার অপকারিতা

নিম পাতা ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয়ে থাকে। কারণ নিম পাতার উপকারিতা অনেক। তবে সব কিছুরই যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে অপকারিতা। ঠিক তেমনি নিম পাতার অনেক অপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাহলে চলুন নিম পাতার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

  • কখনো কখনো অতিরিক্ত নিমপাতা আছে ওদের ফলে আমাদের পাকস্থলীর ক্ষতি হতে পারে। নিম পাতা অত্যন্ত পরিমাণে তিতা হওয়ায় এই পাতা বেশি সেবন করলে পাকস্থলীর ক্ষতি হয়।
  • শরীরের যে কোন ধরনের সার্জারি হলে নিম পাতা খাওয়া যাবেনা। কারণ নিম পাতাতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে তার জন্য নিম পাতা খেলে সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন সমস্যার।
  • যদি কোন মেয়ে গর্ভবতী হয় তাহলে নিম পাতা খাওয়া যাবে না। নিম পাতা অতিরিক্ত পরিমাণে তিতা হওয়ার কারণে গর্ভে থাকা বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
  • যে সকল লোকেদের ব্লাড প্রেসার কম তাদের নিম পাতা খাওয়া যাবে না। কারণ নিম পাতা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু যদি ব্লাড প্রেসার কম থাকে তাহলে উপকারের পরিবর্তে অপকারিতা বেশি হয়।
  • নিম পাতা খাওয়ার ফলে শরীর দুর্বল হতে পারে কিংবা মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া দেখা দিতে পারে বমি বমি ভাব। তাই নিম পাতা খাওয়ার আগে একটু ধুয়ে খাওয়া উচিত।
  • এছাড়াও নিম পাতার অপকারিতা আরো অনেক রকমের রয়েছে। সুতরাং পাতা খাওয়ার সময় আমাদের বুঝে শুনে খেতে হবে। খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই নিম পাতা কে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

লেখকের শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠক ভাই ও বন্ধুরা। এতক্ষণ আপনাদের বললাম নিম পাতা উপকারিতা ও নিম পাতার অপকারিতা সম্পর্কে। আমরা জানতে পারলাম নিম পাতা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকার আবার অপকারিতার কারণ ও হতে পারে। আপনাদের কাছে একটি পরামর্শ আপনারা যখন নিম পাতা ব্যবহার করবেন তখন অবশ্যই নিম পাতাগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। 

তা না হলে এগুলো যখন ব্যবহার করবেন এতে করে উপকারের পরিবর্তে অপকারিতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জাস্টিফাই ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ দেওয়া হয়।

comment url