পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত

আমরা সকলেই আম চিনি এবং তা খেয়ে থাকি। কিন্তু আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন ধারণা নেই। কারণ আমের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু অপকারিতাও। যেমন পাকা আমের উপকারিতা একরকম আবার কাঁচা আমের উপকারিতা আরেক রকম। তেমনি আবার উভয়ই আমের রয়েছে কিছু ক্ষতিকর দিক। যেগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের রোগ ও হতে পারে।
পাকা আমের উপকারিতা
যদি আম ফরমালিনমুক্ত থাকে তাহলে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু আমে যদি ফরমালিন যুক্ত থাকে তাহলে অনেক ধরনের ক্ষতি হয়। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক আমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকা

বাংলাদেশের টক মিষ্টি উভয় সাদের ফলের মধ্যে আম সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ফল। এই ফল কাঁচা এবং পাকা উভয় সময় খাওয়া যায়। এই ফল হয় প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে। অনেকেই আছে যারা কাঁচা টক আম খেতে পছন্দ করে। আবার অনেকেই আছে যারা পাকা আম খেতে পছন্দ করে। কাঁচা এবং পাকা উভয় আম আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপকারে আসে। যেমন পাকা আম ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। 
আবার কাঁচা আম ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সুতরাং আম যেমন আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। আবার আমের কারণেও হতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ। আজকে এই বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আর্টিকেল।

পাকা আমের উপকারিতা

একটি পাকা আমের উপকারিতা রয়েছে অনেক রকমের। কারন একটি পাকা আমে ভিটামিন রয়েছে অধিক পরিমাণে। এছাড়াও একটি পাকা আমের মধ্যে রয়েছে খনিজ লবণ আঁশ ইত্যাদি। আমাদের মানব দেহের জন্য যা অত্যন্ত উপকারী। ক্যারোটিনের মাত্রা পাকা আমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে। এছাড়াও পাকা আমের মধ্যে অনেক জিনিস থাকে যেমন ফসফরাস, ভিটামিন সি, থায়ামিন এবং আয়রন। এছাড়াও প্রোটিন, খনিজ লবণ ইত্যাদি থাকে পাকা আমে। এছাড়াও পাকা আম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাকা আমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: পাকা আমের মধ্যে অধিক পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা আমাদের শরীরকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।

ত্বকের যত্ন করে: আমি যেহেতু অত্যন্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যার ফলে আম আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এছাড়াও মুখে বিভিন্ন ধরনের ফুসকুড়ি করে থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। এছাড়া আমের মধ্যে যে ভিটামিন সি থাকে তা আমাদের ত্বকের বয়স ছাপাতে সহায়তা করে।

চোখের সমস্যা সমাধান করে: যেহেতু আমে অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। যার ফলে চোখের সমস্যা সমাধান করতে আম আমাদের সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: পাকা আমের মধ্যে যে ভিটামিন সি থাকে সেটা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও পাকা আমের উপকারিতা আরো অনেক রয়েছে যা লিখে শেষ করা যাবে না

কাঁচা আমের উপকারিতা

আম কাঁচা হোক কিংবা পাকা তা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটা ফল। তবে কাঁচা আম আমাদের জন্য একটু বেশি উপকারী। চলুন একে একে দেখে নেওয়া যাক কাঁচা আমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়গুলো।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে: কাঁচা আম যেহেতু টক হয় সেজন্য কাঁচা আম ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে।

শরীর ঠান্ডা থাকে: কাঁচা আমের পটাশিয়াম থাকার ফলে আমাদের শরীরে ঘাম কম হয়। আর যার কারণে আমাদের শরীর ঠান্ডা থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কাঁচা আমে অত্যন্ত পরিমাণে ভিটামিন থাকার ফলে তা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।

ঘামাচি দূর করতে পারে: এমন কিছু উপাদান কাঁচা আমে রয়েছে যার আমাদের শরীর ঠান্ডা থাকে। এর ফলে ঘামাচি থেকেও আমরা মুক্তি পাই।

বমি ভাব থেকে মুক্তি: আমাদের অনেকেরই সময় বমি বমি ভাব হয়। তবে আমরা যদি কাঁচা আম খায় তাহলে বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি পেতে পারি।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: কাঁচা আমে যেহেতু তো কোন প্রকার চিনি থাকে না তাই কাঁচা আম খেলে আমাদের ওজন বাড়ে না বরং ওজন কমতে সাহায্য করে।

ত্বক ও চুল সুস্থ: কাঁচা আমে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর পরিমাণে। যার ফলে কাঁচা আমাদের ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বাড়ে: কাঁচা আমে থাকে বিভিন্ন রকম অ্যাসিড। আর তার ফলে কাচ আম আমাদের হজম শক্তিকে গতিশীল করে।

এছাড়াও কাঁচা আমের উপকারিতা রয়েছে আরও অনেক। সুতরাং আমরা বুঝতে পারি কাঁচা আম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটা ফল।

আমের পুষ্টিগুণ

আমাদের দেশে গরমকালের সুমিষ্ট ফলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আম। আম যেমন সুমিষ্ট তেমনি আমের মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ। আর এ সকল পুষ্টিগুন আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত। আমাদের জন্য অনেক উপকারী। আমের অন্যতম একটি উপকারিতা হচ্ছে আমের পুষ্টিগুণ। 

পাক আমে থাকে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, মিনারেল খনিজ লবণ ইত্যাদি যা আমাদের দাঁত ও ত্বক কে অত্যন্ত পরিমাণে সুস্থ রাখে। এছাড়াও এসব পুষ্টিগুণ আমাদের হজমের সহায়তা করে ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। আমি যখন পাকে তখন তা আমাদের ত্বকের লোমের গোড়া শক্ত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও আপনি যদি পাকা আম খান তাহলে আপনার মুখের কালো দাগ ইত্যাদির মত সমস্যা দূর হবে। এছাড়াও পাকা আম আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারে ব্রণের মতো রোগের। 

এমনকি আমের মধ্যে থাকে ২৫ রকমের ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের ইউমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখে। এছাড়াও আমের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ পুষ্টি যা আমাদের হার্ট কে সুস্থ রাখে। এছাড়াও কিছু ভেষজ গুণ থাকে আমের মধ্যে যা আমাদের বড় ধরনের রোগ ক্যান্সার থেকেও বাঁচাতে পারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমি পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক। তবে আপনারা যখন আম খাবেন তখন পুষ্টি সম্মত ফরমালিনমুক্ত আম খাবেন। এতে করে আপনার শরীরে কোন ধরনের অসুবিধা হবে না।

পাকা আমে কি কি ভিটামিন আছে

আমের মধ্যে রয়েছে অনেক রকমের ভিটামিনের সমাহার। একটি আমের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো ভিটামিন। কাঁচা আমের মধ্যে থাকে একরকম ভিটামিন এবং পাকা আমে থাকে আরেক রকম ভিটামিন। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাকা আমি কি কি ভিটামিন আছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত
  • পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন সি অধিক পরিমাণে। তবে কাঁচা আমের তুলনায় পাকা আমের ভিটামিন সি কিছুটা কম রয়েছে। আরে ভিটামিনের ফলে আমাদের অনেক রকম সমস্যার সমাধান করে দেয়। যেমন আমে থাকা ভিটামিন সি আমাদের দাঁতের জন্য অনেক কার্যকরি।
  • আমের মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণের ভিটামিন বি। আর এই ভিটামিন বি এর ফলে আমাদের শরীরে অক্সিজেনের হার ঠিকভাবে সরবরাহ হয়।
  • ভিটামিন ই এমন কি সেলেনিয়ামও রয়েছে আমে। আর এই ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম এর ফলে আম আমাদের শরীরের হার্ট কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • আমের মধ্যে থাকে বিভিন্ন এনজাইম যার ফলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • আমের মধ্যে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড। যা আমাদের শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্য ইত্যাদিকে সঠিকভাবে ঠিকঠাক রাখে।

পাকা আমের অপকারিতা

একটি পাকা আমের উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি এর অপকারিতার দিক ও কিন্তু কম নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাকা আমের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। পাকা আম অধিক পরিমাণে মিষ্টি হয়। কারণ পাকা আমি চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে যে সকল রোগীদের রয়েছে ডায়াবেটিসের সমস্যা তাদের জন্য পাকা আম খাওয়া মোটেও ভালো না। কারণ পাকা আমে অত্যন্ত পরিমাণে চিনি থাকাই এই আম রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এছাড়া যারা এজমা রোগী আছে তাদের জন্য আম পরিমাণে কম খাওয়া উচিত। এমনকি যে সকল রোগীরা কিডনির সমস্যায় ভুগছে তাদের আম খাও মোটেও উচিত না। এছাড়াও পাকা আমের অনেক ও অপকারিতা রয়েছে। যেমন অধিক পরিমাণে পাকা আম খেলে ওজন বেড়ে যায়। এছাড়াও পাকা আমের আরো অনেক রকম অপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুতরাং আমরা বুঝতে পারি কাঁচা আমের উপকারিতা এর পাশাপাশি রয়েছে অনেকগুলো অপকারিতা।

কাঁচা আমের অপকারিতা

আমরা জানি যে কাঁচা আম খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কাঁচা আমে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ অনেক ভিটামিন যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। তবে কাঁচা আমের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আর যেগুলোর উপর আমাদের খেয়াল রাখাটা খুবই জরুরী। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁচা আমের অপকারিতা সম্পর্কে

কাঁচা আম খাওয়া ভালো তবে একদিনের মধ্যে একাধিক কাঁচা আম খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা যদি দিনে খুব বেশি পরিমাণে কাঁচা আম খাই তাহলে আমাদের দেখা দিতে পারে আমাশয়, গলা ব্যথা, পেট ব্যথা এছাড়াও বদ হজমের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা আম খেলে দেখা দিতে পারে ডাইরিয়া। এছাড়া কাঁচা আমে থাকে এক ধরনের কষ।

আর এই কষ যদি আমাদের শরীরের যেকোনো জায়গায় লাগে তাহলে দেখা দিতে পারে এলার্জির মত সমস্যা। এছাড়াও এ কষ শরীরে রাখলে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ। যেমন দেখা দিতে পারে ত্বক ফুলে উঠা,ফোসকা, চুলকানি এছাড়াও আরও বড় ধরনের চর্মরোগ হতে পারে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারি কাঁচা আমের উপকারিতা এর পাশাপাশি রয়েছে অনেকগুলো অপকারিতাও।

লেখকের শেষ মন্তব্য

প্রিয় পাঠক ভাই ও বন্ধুরা। আজকে আপনাদের সামনে আলোচনা করেছি আম খাওয়ার উপকারিতা ও বিভিন্ন রকম অপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা যখন কোন আম বাজার থেকে কিনবেন তখন দেখে নিবেন সেগুলো ফরমালিনমুক্ত কিনা। 

ফরমালিনমুক্ত আম খেলে আমাদের শরীরের খুব একটা ক্ষতি হয় না। এছাড়া যারা ডায়াবেটিসের রোগী আছেন তারা আম না খেলেই বেশি ভালো হয়। তবে আম খাওয়ার ফলে যদি আপনাদের খুব বেশি সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জাস্টিফাই ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ দেওয়া হয়।

comment url